স্বামীর মৃত্যুর পর পুনরায় বিয়ে করলে স্ত্রী কি প্রথম স্বামীর সম্পদ পাবেন?

সম্পদ বন্টন

admin
By admin
4 Min Read

উত্তরঃ একবার কেউ কোন কিছুর মালিক হলে তার মালিকানায় কেউ হস্তক্ষেপ করতে পারে না এবং মৃত্যু না পর্যন্ত তিনি মালিক থাকবেন। এটাই সকল দেশের আইনের সাধারণ নীতি। বিধবা স্ত্রী পুনরায় বিয়ে করুক বা না করুক, উনি সম্পত্তির মালিক থাকবেন ও পাবেন। মৃত ব্যক্তির মৃত্যুর সাথে সাথেই তার ত্যাক্ত সম্পত্তির অংশ অনুযায়ী মালিক হয়ে যান ওয়ারীশরা। পরবর্তী কোন ঘটনা ওয়ারীশদের এই মালিকানায় কোন প্রভাব ফেলতে পারে না।

মিরাস বন্টনের মূল আয়াত হলো পবিত্র কুরআনের সূরা নিসার ১১, ১২ ও ১৭৬ নং আয়াত। এই আয়াত সমূহের বা কুরআন সুন্নাহর কোথাও বলা নাই যে, বিধবা স্ত্রী পুনরায় বিয়ে করলে সাবেক স্বামীর সম্পদ হারাবে। বরং আল্লাহপাক ইদ্দত শেষে তাদের পুনরায় বিবাহের অনুমতি দিয়েছেন। দেখুনঃ

“তোমাদের মধ্যে যাহারা স্ত্রী রাখিয়া মৃত্যুমুখে পতিত হয় তাহাদের স্ত্রীগণ চার মাস দশ দিন প্রতীক্ষায় থাকিবে। যখন তাহারা তাহাদের ইদ্দতকাল পূর্ণ করিবে তখন যথাবিধি নিজেদের জন্য যাহা করিবে তাহাতে তোমাদের কোন গুনাহ নাই। তোমরা যাহা কর আল্লাহ্ সে সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত।” [সূরা বাক্বারাহ-২৩৪]

আর বিবাহ একটি হালাল কাজ।

বিধবা স্ত্রী কতটুকু পাবে তা আল্লাহপাক নীচে উল্লেখ করা আয়াতে বিধান দিয়েছেন,

“তোমাদের স্ত্রীদের পরিত্যক্ত সম্পত্তির অর্ধাংশ তোমাদের জন্য, যদি তাহাদের কোন সন্তান না থাকে এবং তাহাদের সন্তান থাকিলে তোমাদের জন্য তাহাদের পরিত্যক্ত সম্পত্তির এক-চতুর্থাংশ; তাহাদের ওসিয়াত পালন এবং ঋণ পরিশোধের পর। তোমাদের সন্তান না থাকিলে তাহাদের জন্য তোমাদের পরিত্যক্ত সম্পত্তির এক চতুর্থাংশ, আর তোমাদের সন্তান থাকিলে তাহাদের জন্য তোমাদের পরিত্যক্ত সম্পত্তির এক অষ্টমাংশ; তোমরা যাহা ওসিয়াত করিবে তাহা দেওয়ার পর এবং ঋণ পরিশোধের পর। যদি পিতা-মাতা ও সন্তানহীন কোন পুরুষ অথবা নারীর উত্তরাধিকারী থাকে তাহার এক বৈপিত্রেয় ভাই অথবা ভগ্নী, তবে প্রত্যেকের জন্য একষষ্ঠাংশ। তাহারা ইহার অধিক হইলে সকলে সমঅংশীদার হইবে এক-তৃতীয়াংশে; ইহা যাহা ওসিয়াত করা হয় তাহা দেওয়ার এবং ঋণ পরিশোধের পর, যদি কাহারও জন্য ক্ষতিকর না হয়। ইহা আল্লাহ্‌র নির্দেশ, আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, সহনশীল।” [সূরা নিসা-১২]

সমাজে ওয়ারীশ ঠকানোর নানা কায়দা আছে, যেমনঃ মোহরানা নিলে অন্য সম্পত্তি পাবে না, মেয়েরা বাপের বাড়ীর ভাগ পায় না, নামজারী না করা পর্যন্ত ওয়ারীশরা মালিক হয় না, দুজন স্ত্রী হলে স্বামীর আগে মৃত স্ত্রী সম্পত্তি পাবে, মৃত স্বামীর প্রথম পক্ষের সন্তান থাকা সত্বেও দ্বিতীয় নিঃসন্তান স্ত্রী ৪ আনা পাবে, তেমনি লোকজন বের করেছে, বিধবা স্ত্রী পুনরায় বিয়ে করলে সাবেক মৃত স্বামীর ত্যক্ত সম্পত্তির ভাগ পাবে না।

বিধবা স্ত্রী পুনরায় বিয়ে করেছে (বা ২য় স্বামীর মৃত্যু হওয়ায় ৩য় বিয়ে করেছে) ও তারপর সাবেক ১ম স্বামীর কোন হিডেন সম্পদ পাওয়া গেলে তা থেকেও বিধবা স্ত্রী ১/৮ বা ১/৪ অংশ পুনরায় পাবেন।

এখানে উল্লেখ্য যে, সূরা নিসার ১২ নং আয়াত অনুযায়ী মৃত ব্যক্তির ঔরসজাত সন্তান (তা সে সন্তান যে কোন স্ত্রীর গর্ভজাত হোক না কেনো) থাকলে স্ত্রী (একাধিক হলে সকলে মিলে) পাবেন ১/৮ অংশ এবং না থাকলে সকলে মিলে ১/৪ অংশ পাবেন।

মিরাস বন্টন মৃত ব্যক্তির ঔরসজাত সন্তান থাকা বা না থাকার উপর নির্ভর করে, ওয়ারীশের সন্তান থাকা বস না থাকার উপর নির্ভর করে না।]

ইসলামী আইনে বিপত্নীক স্বামীর জন্যও একই নিয়ম প্রযোজ্য।

বাংলাদেশে প্রচলিত হিন্দু আইনের দায়ভাগ মতে বিধবা স্ত্রী তার স্বামীর ত্যক্ত সম্পত্তি থেকে ১ পুত্রের সমান অংশ বা পুত্র, পৌত্র, প্রপৌত্র না থাকলে সমুদয় ষোলআনা সম্পত্তি জীবনস্বত্বে পান। বিধবা স্ত্রীর মৃত্যুর পর এই সম্পত্তি স্বামীর পরবর্তী সপিণ্ড বা ওয়ারীশ(গন) পান। যদি বিধবা স্ত্রী পুনরায় বিয়ে করেন তাহলে তিনি হিন্দু আইন অনুযায়ী প্রাপ্ত সম্পত্তির উপর মালিকানা / জীবনস্বত্ব হারাবেন। ফলে তার পুনরায় বিয়ের কারণে এই সম্পত্তি স্বামীর কুলে চলে যাবে। এইরকম বিধান মুসলিম আইনে নেই এবং কখনও ছিলো না।]

Share This Article
Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *