সস্তায় বিমান টিকিট কেনার ৭টি কার্যকর টিপস

admin
By admin
6 Min Read

১. মঙ্গলবার এবং বুধবার টিকিট বুক করুন
বিমান টিকিট কেনার জন্য সেরা সময় হল মঙ্গলবার এবং বুধবার। এয়ারলাইনস সাধারণত মঙ্গলবার দুপুরে তাদের বুকিং সিস্টেম আপডেট করে এবং পরের সপ্তাহের জন্য ডিসকাউন্ট দেওয়া শুরু করে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বেশিরভাগ মানুষ শুক্রবার থেকে রবিবারের মধ্যে টিকিট অনুসন্ধান করে, যার ফলে চাহিদা বাড়ে এবং টিকিটের দাম বেড়ে যায়। সপ্তাহান্তের ভিড় এড়িয়ে মঙ্গলবার বা বুধবার বুকিং করলে আপনি সাধারণত কম দামে টিকিট পেতে পারেন।

২. আগাম বুক করুন, তবে খুব বেশি আগাম নয়
আগাম টিকিট বুক করা গুরুত্বপূর্ণ, তবে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা আছে। অভ্যন্তরীণ ভ্রমণের জন্য সাধারণত ভ্রমণের ২১ থেকে ৬০ দিন আগে এবং আন্তর্জাতিক ভ্রমণের জন্য ২ থেকে ৩ মাস আগে টিকিট বুক করা উচিত। খুব বেশি আগাম বুক করলে সেরা ডিল পাওয়া নাও যেতে পারে, কারণ এয়ারলাইনস সাধারণত এই সময়ে সবচেয়ে সস্তা টিকিট অফার করে। এছাড়া, ভ্রমণের তারিখ যত কাছে আসবে, টিকিটের দাম ততই বাড়বে। দাম পরিবর্তনের দিকে নজর রাখুন এবং ডিল পাওয়া মাত্রই টিকিট কেটে নিন।

৩. কম ব্যস্ত দিনের জন্য উড়ুন
মঙ্গলবার, বুধবার এবং মাঝে মাঝে শনিবার উড়ান ছাড়ার জন্য সেরা দিন, কারণ এগুলো কম ব্যস্ত দিন হিসেবে বিবেচিত হয়। এয়ারলাইন্সগুলো এই দিনগুলোতে কম ভ্রমণকারীর কারণে প্রায়শই টিকিটের দাম কমিয়ে দেয়। বিপরীতে, শুক্রবার, রবিবার এবং সোমবারের ফ্লাইটগুলি বেশি ব্যয়বহুল হতে পারে, কারণ এ সময় ব্যস্ততার কারণে চাহিদা বেশি থাকে।

৪. আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের জন্য আগেভাগে ডিল খুঁজুন
আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের জন্য এয়ারলাইনস প্রায় ১১ থেকে ১২ সপ্তাহ আগে সেরা ডিল অফার করে। দাম ওঠানামা করে, বিশেষ করে ভ্রমণের তারিখ যত কাছাকাছি আসে। ফ্লাইটের দাম মনিটর করার জন্য ফ্লাইট তুলনা টুল ব্যবহার করুন এবং দাম কমলে সতর্কীকরণ সেট করুন। এছাড়াও, ছোট বিমানবন্দর ব্যবহার করার বিষয়টি বিবেচনা করুন। উদাহরণস্বরূপ, লন্ডনে যাওয়ার পরিবর্তে, আপনি গ্যাটউইক বা স্ট্যানস্টেডের মতো ছোট বিমানবন্দর ব্যবহার করতে পারেন, যা সস্তা হতে পারে এবং শহরে সহজে পৌঁছানো সম্ভব।

৫. নিকটবর্তী বা ছোট বিমানবন্দর বেছে নিন
ফ্লাইট বুক করার সময় শুধু বড় বিমানবন্দরেই না, কাছাকাছি ছোট বিমানবন্দরগুলিও বিবেচনা করুন। ছোট আঞ্চলিক বিমানবন্দরে প্রায়ই সস্তা ফ্লাইট পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ, লন্ডনের ব্যস্ত হিথ্রো বিমানবন্দরের পরিবর্তে গ্যাটউইক, লুটন বা ম্যানচেস্টারের মতো ছোট বিমানবন্দর বেছে নিতে পারেন। ফ্লাইটে সাশ্রয় করতে পারবেন এবং পরবর্তী পরিবহন খরচও বেশি হবে না। এছাড়াও, ছোট বিমানবন্দরগুলো কম ভিড়যুক্ত এবং আরও দ্রুত পরিষেবা দেয়।

৬. ব্রাউজারের কুকিজ মুছুন এবং ইনকগনিটো মোড ব্যবহার করুন
অনেক ভ্রমণকারী জানেন না যে এয়ারলাইন বুকিং সাইটগুলো আপনার ব্রাউজিং ইতিহাস ট্র্যাক করে। আপনি যখন বারবার একটি এয়ারলাইন সাইটে টিকিট খোঁজেন, তখন সিস্টেম এটি শনাক্ত করতে পারে এবং এর ফলস্বরূপ দাম বাড়িয়ে দিতে পারে। এজন্য, টিকিটের দাম অনুসন্ধানের আগে ব্রাউজারের কুকিজ মুছুন বা ইনকগনিটো মোড ব্যবহার করুন। এটি আপনাকে ন্যায্য দামে টিকিট দেখতে সাহায্য করবে, যা সিস্টেম অতীত অনুসন্ধানের ভিত্তিতে পরিবর্তন করে না।

৭. দাম তুলনা করার জন্য বিভিন্ন ওয়েবসাইট এবং সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করুন
ফ্লাইট বুক করার সময় শুধু একটি সাইটে নির্ভর করবেন না। একাধিক প্ল্যাটফর্মে টিকিটের দাম তুলনা করে দেখুন যাতে আপনি সেরা ডিলটি পেতে পারেন। কিছু নির্ভরযোগ্য ফ্লাইট তুলনা করার ওয়েবসাইট এবং সার্চ ইঞ্জিন হল:

  • Skyscanner: বিভিন্ন এয়ারলাইন এবং ডিলের বিস্তারিত তুলনা দেয়।
  • Google Flights: ব্যবহারকারী-বান্ধব একটি টুল যা ভিন্ন ভিন্ন গন্তব্য এবং দামের প্রবণতা প্রদর্শন করে।
  • Momondo: বিভিন্ন বুকিং সাইট থেকে ফ্লাইটের দাম তুলনা করে।
  • Kayak: বিভিন্ন এয়ারলাইনের ডিল একত্রিত করে দেখায়।
  • CheapFlights: বিভিন্ন এয়ারলাইনসের বাজেট-বান্ধব অপশনগুলির জন্য পরিচিত।
  • Ita Software by Google: একটি শক্তিশালী টুল যা তারিখ এবং গন্তব্যের ক্ষেত্রে নমনীয় হলে সেরা ফ্লাইটগুলি খুঁজে বের করে।

বিমান ভ্রমণে অতিরিক্ত টিপস:

  • ফ্ল্যাশ সেল এবং শেষ মুহূর্তের ডিল কাজে লাগান
    অনেক এয়ারলাইনস ফ্ল্যাশ সেল বা শেষ মুহূর্তের ডিল অফার করে, যখন তাদের অবিক্রিত সিট থাকে। এয়ারলাইনস এবং ট্র্যাভেল এজেন্সির নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন অথবা সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের অনুসরণ করুন যেন আপনি এই সীমিত সময়ের অফারগুলো সম্পর্কে জানতে পারেন। যদি আপনার ভ্রমণের তারিখ ও গন্তব্য নিয়ে নমনীয়তা থাকে, তবে শেষ মুহূর্তের ডিলগুলো ভালো সাশ্রয় এনে দিতে পারে।
  • এয়ারলাইনসের লয়ালটি প্রোগ্রাম এবং ক্রেডিট কার্ড পয়েন্ট ব্যবহার করুন
    যদি আপনি নিয়মিত ভ্রমণ করেন, তবে এয়ারলাইনসের লয়ালটি প্রোগ্রামগুলো ব্যবহার করতে পারেন। এই প্রোগ্রামগুলোর মাধ্যমে আপনি বিনামূল্যে ফ্লাইট, আপগ্রেড, বা ডিসকাউন্ট পেতে পারেন। এছাড়াও, ভ্রমণ পুরস্কার পয়েন্ট প্রদান করে এমন ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করুন। এই পয়েন্টগুলো আপনি বিমান টিকিটের জন্য রিডিম করতে পারেন, যা আপনার ভ্রমণের খরচ কমাতে সাহায্য করবে।
  • বাজেট এয়ারলাইনস বিবেচনা করুন
    অনেক বাজেট এয়ারলাইনস বিশেষ করে ছোট বা স্থানীয় রুটে সস্তা ভাড়া প্রদান করে। তবে, তাদের অতিরিক্ত চার্জ যেমন ব্যাগেজ ফি বা সিট নির্বাচন ফি সম্পর্কে সতর্ক থাকুন। যদি আপনি হালকা ভ্রমণ করতে পারেন এবং কিছু বিলাসিতা ত্যাগ করতে রাজি থাকেন, তবে Ryanair, EasyJet বা AirAsia এর মতো বাজেট এয়ারলাইনসগুলো উল্লেখযোগ্য সাশ্রয় এনে দিতে পারে।
  • ভ্রমণের তারিখে নমনীয় থাকুন
    যদি আপনার ভ্রমণ পরিকল্পনায় তারিখ নিয়ে নমনীয়তা থাকে, তাহলে ভিন্ন তারিখে উড্ডয়ন এবং অবতরণের সম্ভাবনাগুলো দেখুন। কিছু বুকিং সাইট ফ্লেক্সিবল তারিখ টুল অফার করে, যা দেখায় কোন সময় সস্তা ফ্লাইট পাওয়া যায়।
  • মাল্টি-সিটি বা লেআভার ফ্লাইটের কথা বিবেচনা করুন
    নন-স্টপ ফ্লাইট অনেক সময় সুবিধাজনক হলেও, সেগুলো প্রায়ই ব্যয়বহুল হয়। যদি আপনি কিছু সময় লেআভারে কাটাতে পারেন, তবে মাল্টি-সিটি ফ্লাইটের টিকিট সস্তা হতে পারে। এছাড়া, আপনি এক বা একাধিক শহরে ছোট বিরতি দিয়ে নতুন কিছু এক্সপ্লোরও করতে পারেন।

এই কৌশলগুলো অনুসরণ করে এবং আপনার ভ্রমণের পরিকল্পনা আরও নমনীয় করে তুললে আপনি ফ্লাইটে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে সাশ্রয় করতে পারবেন। সঠিকভাবে পরিকল্পনা এবং গবেষণা করলে সেরা ডিল পেয়ে আপনার যাত্রা আরও সাশ্রয়ী হবে।

Share This Article
Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *