রিজার্ভ স্পর্শ না করেই ১.৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ কীভাবে শোধ হলো

admin
By admin
3 Min Read

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে, বাংলাদেশ ১.৫ বিলিয়ন ডলার বিদেশি ঋণ শোধ করে নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে, তাও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ স্পর্শ না করেই। এই উল্লেখযোগ্য সাফল্য দেখিয়েছে যে, বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক কৌশলগত পরিবর্তন এনেছে, যা দেশের অর্থনীতির স্থিতিশীলতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

পটভূমি: বৈদেশিক মুদ্রার সংকট

গত দুই বছরে বাংলাদেশ বৈদেশিক ঋণ, বিশেষত জ্বালানি ও বড় মাপের প্রকল্পের জন্য ব্যয়বহুল আমদানি নিয়ে চাপের মুখোমুখি হয়েছে। সার, তেল, ও বিদ্যুতের মতো গুরুত্বপূর্ণ পণ্য আমদানি করতে যে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা দরকার হয়, তার জন্য ২০২৩ অর্থবছরে প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়েছে​।

এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের রিজার্ভের ওপর বিরাট চাপ পড়ে এবং বৈদেশিক ঋণ সময়মতো পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি। প্রায় ২.৫ বিলিয়ন ডলারের ঋণ বিদেশি প্রতিষ্ঠান যেমন আদানি, কাফকো, ও শেভরনের কাছে বকেয়া পড়েছিল, যা দেশের অর্থনীতির ওপর বাড়তি বোঝা সৃষ্টি করেছিল​।

আন্তব্যাংক কৌশল: নতুন পথের সন্ধান

এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক একটি নতুন কৌশল গ্রহণ করে। রিজার্ভে না গিয়ে, তারা আন্তব্যাংক মার্কেটে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ডলার ব্যবহারের পথ বেছে নেয়। গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, প্রবাসীদের রেমিট্যান্স ও রফতানি আয়ের ডলার প্রথমে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতেই জমা হয়, যা পরবর্তীতে ব্যবহার করা যায়​।

ব্যাংকগুলোর মধ্যে যারা অতিরিক্ত ডলার জমা করেছে, যেমন ইসলামী ব্যাংক, তাদের থেকে প্রয়োজনীয় ডলার সংগ্রহ করে ঋণ পরিশোধ করা হয়। এভাবে বাংলাদেশ ১.৫ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেছে রিজার্ভ স্পর্শ না করেই। এখনও ৪০০ মিলিয়ন ডলার বাকি আছে, যা আগামী দুই মাসের মধ্যে পরিশোধ করা হবে​।

দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ ও অর্থ পাচার বন্ধে সাফল্য

অর্থ পাচার ও দুর্নীতি রোধে সরকারের কড়া পদক্ষেপও এই সাফল্যে ভূমিকা রেখেছে। এর ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের প্রবাহ বেড়েছে এবং বৈদেশিক মুদ্রার সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে​ । এই কার্যকর ব্যবস্থাপনায় দেশের অর্থনীতির স্থিতিশীলতা রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও অর্থনৈতিক চিত্র

অর্থনীতিতে এই সাম্প্রতিক সাফল্য সত্ত্বেও, বাংলাদেশ এখনও বৈদেশিক ঋণের চাপে আছে এবং আরও বৈদেশিক ঋণ সংগ্রহের প্রয়োজন রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১০ বিলিয়ন ডলারের ঋণ সংগ্রহের পরিকল্পনা করছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে, যা অর্থনৈতিক কার্যক্রমে গতি আনবে​

গভর্নর ড. মনসুর আশা প্রকাশ করেন, এই ঋণ নিশ্চিত হলে অর্থনীতিতে আরও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির সম্ভাবনা তৈরি হবে। এদিকে, দেশের মূল্যস্ফীতিও কিছুটা কমতে শুরু করেছে এবং জ্বালানি, সার ও বিদ্যুতের মতো গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের আমদানিও স্বাভাবিক হচ্ছে।

স্থিতিশীল ও সুষম অর্থনৈতিক কৌশল

বাংলাদেশের ১.৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ রিজার্ভ স্পর্শ না করে পরিশোধ করা, দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় একটি বড় সাফল্য। আন্তব্যাংক মার্কেট, দুর্নীতি দমন, এবং রেমিট্যান্স ব্যবস্থাপনা—এই তিনটি দিকই বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ নিশ্চিত করতে ভূমিকা রেখেছে।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এই সুষম কৌশল ভবিষ্যতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। দেশটি যদি বৈদেশিক ঋণ সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করে এবং অভ্যন্তরীণ উন্নয়নে মনোনিবেশ করে, তবে অর্থনৈতিক সম্ভাবনা আরও উজ্জ্বল হতে পারে।

Share This Article
Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *