চটপটির দোকানের আড়ালে ব্যাংক ঋণের জালিয়াতি: নওরোজ এন্টারপ্রাইজের ২৩৪ কোটি টাকার কেলেঙ্কারি

admin
By admin
3 Min Read
চটপটির দোকানে ব্যাংকের ঋণ ২৩৪ কোটি টাকা

চট্টগ্রামের নওরোজ এন্টারপ্রাইজ, যার একটি চটপটির দোকান ও দুটি রেস্তোরাঁ রয়েছে, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের তিনটি শাখা থেকে ২৩৪ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির মালিক নাজমি নওরোজ এই বিপুল ঋণ নিয়েছেন তার ক্ষুদ্র ব্যবসার আড়ালে। নগরীর আসকার দিঘির পাড়ে অবস্থিত ‘ইট অ্যান্ড ট্রিট’ নামের চটপটির দোকান এবং দুটি রেস্তোরাঁ, ফিউশন ইটস ও লা এরিস্টোক্রেসি দেখিয়ে ঋণ নেওয়া হয়। লা এরিস্টোক্রেসি রেস্তোরাঁটি তিনবার স্থান পরিবর্তন করে বর্তমানে নগরীর আগ্রাবাদে অবস্থিত।

কীভাবে হলো এত বড় ঋণ?

এত বিপুল ঋণ পাওয়ার মূল কারণ হিসেবে ব্যাংক মালিকের বিশেষ আগ্রহকে চিহ্নিত করা হয়েছে। নাজমি নওরোজ ঋণ শোধ না করেও বিলাসী জীবনযাপন চালিয়ে যাচ্ছেন, এবং ব্যাংকের কর্মকর্তাদের উপহার দিয়ে ‘খুশি’ রাখতেন। ব্যাংকের মালিকপক্ষ ঋণকে খেলাপি না দেখিয়ে অশ্রেণিবদ্ধ (আনক্লাসিফায়েড) হিসেবে রেখে দেয়, যা তাকে দীর্ঘদিন ঋণ পরিশোধ থেকে রেহাই দিয়েছে।

বিশাল ঋণের হিসাব

লা এরিস্টোক্রেসি রেস্তোরাঁর নামে যেখানে ২ কোটি টাকার ঋণসীমা ছিল, নাজমি নওরোজ উত্তোলন করেছেন ৭০ কোটি টাকা। এই ঋণ এখন সুদসহ ১১৭ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। এছাড়াও, প্রবর্তক মোড়ের ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের শাখা থেকে তিনি ৫৪ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন, যা সুদে-আসলে ৯০ কোটি ৪৫ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। চকবাজার শাখা থেকে তিনি আরও ২৭ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। তবে নাজমির দাবি, এই ঋণ আসলে ব্যাংকের মালিক সাইফুল আলম মাসুদ নিয়েছেন।

ব্যাংকের প্রতিক্রিয়া ও মামলা

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদের ইচ্ছাতেই এই ঋণ বিতরণ হয়েছে বলে দাবি করেন নাজমি নওরোজ। তিনি বলেন, তার জামানত দেওয়া সম্পদ থেকে ৪০ কোটি টাকার ঋণ পাওয়া সম্ভব ছিল, কিন্তু মাসুদের ইচ্ছায় ঋণ অনেক বেশি দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকটি দীর্ঘদিন তাকে ঋণ খেলাপি হিসেবে দেখায়নি, তবে ২০২৩ সালে তাকে ঋণ খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করে এবং পাওনা আদায়ের জন্য মামলা দায়ের করে।

লেয়ারিং কৌশল ও অবৈধ অর্থ পাচার

নাজমি নওরোজ বিভিন্ন জায়গায় বারবার রেস্তোরাঁর শাখা বদল করেছেন, যা ব্যাংক থেকে অধিক ঋণ উত্তোলনের কৌশল ছিল। তার লেয়ারিং কৌশলের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে উত্তোলিত অর্থকে গোপন রাখা হয়, যেমন অর্থ এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে স্থানান্তর, ট্রাভেলার্স চেকে রূপান্তর বা বিদেশে পাচার করা। নওরোজ রেস্তোরাঁ ব্যবসার আড়ালে বিলাসী জীবনযাপন করেন। তার গাড়ির দাম এবং সন্তানের বিদেশে লেখাপড়ার খরচ এই সামান্য ব্যবসার সঙ্গে মেলানো কঠিন।

নওরোজ এন্টারপ্রাইজের ঋণ কেলেঙ্কারি বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের দুর্বলতা ও অনিয়মকে স্পষ্টভাবে প্রকাশ করে। ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা, মালিকপক্ষের প্রভাব ও লেয়ারিং কৌশলের মাধ্যমে একটি সাধারণ চটপটির দোকানের আড়ালে কিভাবে কোটি কোটি টাকার ঋণ নেওয়া সম্ভব হয়েছে, তা এই ঘটনা থেকে বোঝা যায়।

Share This Article
Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *